হাদীস গ্রন্থগুলো মধ্যে ছয়টি বইকে সবচেয়ে বেশি বিশুদ্ধ বই বলে মনে করা হয়। এটি ‘সিহাহ সিত্তা’ বা ‘ছয় বিশুদ্ধ বই’ -নামে পরিচিত। সিহাহ অর্থ বিশুদ্ধ, সিত্তা অর্থ ছয়। সিহাহ সিত্তা এর আভিধানিক অর্থ হল ছয়টি বিশুদ্ধ, আর ইসলামী পরিভাষায় এটি হাদীস শাস্ত্রের ছয়টি নির্ভুল ও বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ।
সিহাহ সিত্তা হাদীস গ্রন্থগুলো এবং সংকলকদের নাম:
১। সহীহ বুখারী
২। সহীহ মুসলিম
৩। জামে তিরমিযী
৪। সুনানে আবু দাউদ
৫। সুনানে নাসায়ী
৬। সুনানে ইবনে মাজাহ
হাদীস গ্রন্থ গুলো সম্পর্কে:
১। সহীহ বুখারী- সহীহ বুখারী হল আল কুরআনের পরে মুসলিমদের সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ ও গ্রহনযোগ্য গ্রন্থ। এর লেখক ইমাম বুখারী (র:)। ১৬ বছর সাধনা করে তিনি বুখারী বইটি লিখেন এবং প্রত্যেকটি হাদীসের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য, লেখার আগে আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েতের জন্য দুই রাকাত নামায পড়ে নিতেন।
২। সহীহ মুসলিম – সহীহ বুখারীর পরেই সহীহ মুসলিমের স্থান। এর লেখক ইমাম মুসলিম (র:)। কোনো কোনো হাদীস বিশেষজ্ঞের মতে এটি পূর্নবিন্যাস বা সাজানো ও পুনরাবৃত্তির মানের দিক দিয়ে বুখারীর চেয়ে ভাল। ইমাম মুসলিম শব্দ / কর্ম / বাণী ও নবী অনুমোদন সংরক্ষণের যথাসাদ্ধ প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন। তিনি হাদীস বর্ণনাকারীর সুর্তের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ৪-৫ জন বর্ণনাকারী, কিছু ৩ জনের নামও ব্যবহার করেছেন । ইমাম মুসলিম (র), ইমাম বুখারী(র)-এর খুব ভাল ছাত্র ছিলেন। বুখারী ও মুসলিমকে একত্রে মুত্তাফাকুন আলাইহ বলা হয়।
৩। জামি তিরমিযী- বুখারী ও মুসলিমের পরে এর অবস্থান। লেখক ইমাম তিরমিযী (র:)। এই বই এর সকল হাদীস সহীহ নয়। সহীহ হাদীসের পাশাপাশি দুর্বল হাদীসও রয়েছে যদিও এর পরিমান অল্প।
৪। সুনানে আবু দাউদ (র:)। এর লেখক ইমাম আবুদাউদ (র:)। এ গ্রন্থে শরয়ী বিধি-বিধান সংক্রান্ত হাদিসসমূহ ব্যাপকভাবে সংগ্রথিত করা হয়েছে। ফিকহী আইন-বিধান ও মাসআলা-মাসায়েলের একটি উত্তম উৎস এ গ্রন্থ। সহীহ হাদীসের পাশাপাশি দুর্বল হাদীস রয়েছে।
৫। সুনানে নাসায়ী – লেখক ইমাম নাসাই (র:)। এ গ্রন্থে শরয়ী বিধি-বিধান সংক্রান্ত হাদিসসমূহ ব্যাপকভাবে সংগ্রথিত করা হয়েছে। ফিকহী আইন-বিধান ও মাসআলা-মাসায়েলের একটি উত্তম উৎস এ গ্রন্থ। সহীহ দুর্বল উভয় প্রকার হাদীস রয়েছে।
৬। সুনানে ইবনে মাজাহ – সিহাহ সিত্তার সবশেষ গ্রন্থ। লেখক ইমাম ইবনে মাজাহ (র:)। সহীহ ও দুর্বল হাদীস ছাড়াও প্রায় পঞ্চাশের মত মাঊদু বা জাল হাদীসও রয়েছে।
বিশ্বস্ততা হিসেবে হাদীস তিন প্রকার
১। সহীহ হাদীস: যে হাদীসের বর্ণনাকারীদের বর্ণনার ধারাবাহিকতা রয়েছে, সনদের প্রতিটি স্তরে বর্ণনাকারীর নাম, বর্ণানাকারীর বিশ্বস্ততা, আস্তাভাজন, স্বরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর কোনস্তরে তাদের সংখ্যা একজন হয়নি তাকে সহীহ হাদীস বলে।
২। হাসান হাদীস: সহীহ সবগুনই রয়েছে, তবে তাদের স্বরণ শক্তির যদি কিছুটা দুর্বলতা প্রমাণিত হয় তাকে হাসান হাদীস বলে।
৩। যায়ীফ হাদীস: হাসান, সহীহ হাদীসের গুন সমুহ যে হাদীসে পাওয়া না যায় তাকে যায়ীফ হাদীস বলে।
মুহাদ্দিসগণ বিশুদ্ধভাবে তারতম্য অনুযায়ী হাদীস গ্রন্থাবলীকে আবার পাঁচটি স্তরে বিভক্ত করেছেন :
প্রথম স্তর : ১. মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক, ২. সহীহ বুখারি, ৩. সহীহ মুসলিম। এ তিনটি গ্রন্থই সনদের বিশুদ্ধতা ও বর্ণনাকারীদের বিশ্বস্ততার দিক থেকে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী।
দ্বিতীয় স্তর : এ স্তরের কিতাবসমূহ প্রথম স্তরের খুব কাছাকাছি। এ স্তরের কিতাবে সাধারণতঃ সহীহ্ ও হাসান হাদীছই রয়েছে। যঈফ হাদীস ত্রতে খুব কমই আছে। সুনানে নাসাঈ, আবু দাউদ ও জামি তিরমিযী এ স্তরেরই কিতাব। সুনানুদ-দারিমী, সুনানে ইবন মাজা এবং শাহ ওয়ালিয়্যল্লাহ-এর মতে মুসনাদ ইমাম আহমাদকেও এ স্তরে শামিল করা যেতে পারে। এই দুই স্তরের কিতাবের উপরই সকল মাযহাবের ফকীহগণ নির্ভর করে থাকেন।
তৃতীয় স্তর : এ স্তরের কিতাবে সহীহ, হাসান, যঈফ, মারূফ ও মুনকার সকল রকমের হাদীছই রয়েছে। মুসনাদ আবী ইয়া’লা, মুসনাদ আবদুর রায্যাক এবং ইমাম বায়হাকী, ইমাম তাহাবী ও ইমাম তাবারানী (র)-এর কিতাবসমূহ এ স্তরেরই অন্তর্ভূক্ত।
চতুর্থ স্তর : বিশেষজ্ঞগণের বাছাই ব্যতীত এ সকল কিতাবের হাদীছ গ্রহণ করা যেতে পারে না। এ স্তরের কিতাবসমূহে সাধারণতঃ যঈফ ও গ্রহণের অযোগ্য হাদীছই এসব গ্রন্থে ব্যাপক হারে রয়েছে। সাধারণ ওয়ায়েয, ইতিহাস ও কাহিনী লিখক এবং তাসাউফপন্থীগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব গ্রন্থাবলীর আশ্রয় গ্রহণ করে থাকেন। ইবন হিব্বানের কিতাবুদ-দু’আফা, ইবনুল-আছীরের আল-কামিল এবং খাতীব আল-বাগদাদী ও আবূ নুআয়ম-এর কিতাবসমূহ এই স্তরের অন্তর্ভূক্ত।
পঞ্চম স্তর: উপরিক্ত স্তরে যে সকল কিতাবের স্থান নাই সে সকল কিতাবই এ স্তরের কিতাব।
হাদীসে কুদসী:
যে হাদীসের মুল বক্তব্য আল্লাহ সরাসরি রাসূল(স:) কে ইলহাম বা স্বপ্ন যোগে জানিয়ে দিয়েছেন, রাসূল(স:) নিজ ভাষায় তা বর্ণনা করেছেন তাকে হাদীসে কুদসী বলে।
মুসলিম উম্মার মতে, সিহাহ সিত্তা বই গুলোর মধ্যে সহীহ আল বুখারী এবং সহীহ মুসলিম-এ অন্তুর্ভুক্ত কিছু ছাড়া প্রায় সকল হাদীস বিশুদ্ধ। তবে দুর্বল হাদীস গুলো বুখারী ও মুসলিমে তা স্পষ্টভাবে বা পরোক্ষভাবে তার কারন ব্যাখ্যা দেয়া আছে। অন্যান্য হাদীস বইগুলোতে বিশুদ্ধের পাশা পাশি বেশ কিছু দুর্বল হাদিসের উল্লেখ আছে যা কিছু কিছু, বই-এর লেখক নিজে বা অন্যান্য হাদীস বিশেষজ্ঞ তা উল্লেখ করেছেন।
এবং আল্লাহই ভাল জানেন।।
ডাউনলোড
বুখারী শরীফ
বুখারী শরীফ (১-১০ খন্ড) ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
সহীহুল বুখারী (১-৬ খন্ড) তাওহীদ পাবলিকেশন্স
মুসলিম শরীফ
সহীহ মুসলিম (১-৮ খন্ড) বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ঢাকা
মুসলিম শরীফ (১-৬ খন্ড) ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিরমিযী শরীফ
যঈফ আত্-তিরমিযী (১-২ খন্ড) এবং সহীহ আত-তিরমিযী (১-৬খন্ড)
মূলঃ ইমাম হাফিয মুহাম্মাদ বিন ঈসা সাওরাহ আত্-তিরমিযী (র)
তাহকীকঃ মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (আবূ আব্দুর রহমান)
অনুবাদ ও সম্পাদনায়ঃ হুসাইন বিন সোহরাব
প্রকাশনায়ঃ হুসাইন আল-মাদানী প্রকাশনী
সুনানে আবু দাউদ
আবু দাঊদ শরীফ (১-৪ খন্ড) ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তাহক্বীককৃত সুনান আবূ দাঊদ (১-৫) – আল্লামা আলবানী একাডেমী
মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক (১-২ খন্ড) – ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সুনানে নাসায়ী (১-৪ খন্ড) – ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সুনানে ইবনে মাজাহ (১-৩ খন্ড) – ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তাহকীক সুনান ইবনু মাজাহ – (১-৩ খন্ড) তাওহীদ পাবলিকেশন্স
I like hadis