“২৪ ঘন্টা ব্যবহারিক জীবনে আমলযোগ্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ১০০০ সুন্নাত” বইটি শাইখ খালীল আল হোসেনান রচিত ‘1000 Sunan Every Day and Night’ বই এর অনুবাদ। বইটি অনুবাদ করেছেন ডক্টর শাহ মুহাম্মদ ‘আবদুর রাহীম ও মোহাম্মদ নাছের উদ্দিন’। প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর জন্য এটি একটি অতীব প্রয়োজনীয় বই। বইটিতে কুর’আন ও হাদীসের ভিত্তিতে ব্যক্তিগত, সামাজিক, পারিবারিক, ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান, ওযূ, গোসল, নামায, রোযা, দু’আ, দরূদ ইত্যাদি সাবলীল ভাষায় সুচারুভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ বই পড়ার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাত অনুসারে ২৪ ঘন্টা ব্যবহারিক জীবনে ইসলামের অনুসরণ ও অনুকরণ করা যাবে। আশা করা যায় বইটি থেকে একজন মুসলিম তার দৈনন্দিন জীবনে রাসূলের সুন্নাত অনুসরণ করে পথ চলতে সাহায্য করবে। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাত অনুসরণের মাধ্যমেই দুনিয়ার শান্তি ও পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত করা। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর কথা, কাজ ও সমর্থনের মাধ্যমে যে সকল আমল প্রমাণিত হয়েছে তা দ্বারা একজন মুসলমান সকাল থেকে সন্ধ্যা পযন্ত সুন্নাতী জীবন অতিবাহিত করতে পারেন। যূননুন মিসরী (র) বলেন: “আল্লাহ ﷻ কে ভালোবাসার নির্দশন হলো তাঁর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা বলেছেন, যা করেছেন এবং যাতে সম্মতি দিয়েছেন তা করা আর যাতে নিষেধ করেছেন তা না করা।“
আল্লাহ তা’আলা বলেন:
বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু”
হাসান আল বসরী (র) বলেন, ‘বান্দার আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হচ্ছে তাঁর নবী (ﷺ) এর সুন্নাহর প্রতি তাদের আমল বা অনুগামিত।‘
ঈমানদারদের মর্যাদাকে পরিমাপ করা হয় তাঁর নবীর সুন্নাহর অনুসারণ অনুযায়ী। আল্লাহর নিকট সেই অতি প্রিয় যে তাঁর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর সুন্নাহ অনুসরণে যত বেশি অগ্রগামী। এই বইটির উদ্দেশ্য মুসলিমদের কাজকর্মে নবী করীম (ﷺ) এর সুন্নাহকে পুনর্জাগরিত করা। তাদের দৈনন্দিত জীবন, ইবাদত, ঘুম, পানাহার, লোকদের সাথে আচার-আচরণ, পবিত্রতা, ঘরে প্রবেশ এবং বাইরে যাওয়া, পোশাক পরিধান এবং বাকি অন্যান্য ক্ষেত্রে। এটা আশ্চর্যের বিষয় যে, যদি আমাদের কেউ কিছু অর্থ হারায়, সে কত মনোযোগ দেয় এবং এই ব্যাপারে কত চিন্তিত হয় ও কত চেষ্টা করে এটাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য। অথচ কত সুন্নাহ আমাদের জীবনে আমরা হারাচ্ছি? এটা কি আমাদেরকে চিন্তিত করে? আমরা কি এগুলোকে আমাদের জীবনে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা-সাধনা করি? সমস্যা হচ্ছে আমরা অর্থ-বিত্তকে, সুন্নাহর চাইতে বেশি প্রাধান্য দেই। কিন্তু সম্পদ কোনো উপকারে আসবে না যখন আমাদেরকে করবে শোয়ানো হবে এবং জমিনের মাটি আমাদের উপর চাপা দেয়া হবে।
আল্লাহ বলেন:
“কিন্তু তোমরা দুনিয়ার জীবনকেই বেশি প্রাধান্য দাও। অথচ আখিরাত হচ্ছে খাইর (উত্তম) এবং স্থায়ী।“
এ বইয়ে এমন কতগুলো সুন্নাত সংকলন আছে যা মানুষ সকাল-সন্ধ্যা অনুসরণের মাধ্যমে পরকালীন পুরস্কার পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত। এ সকল সুন্নাহ প্রতিটি মানুষ খুব সহজেই সকাল-সন্ধ্যা অনুসরণ ও আমল করতে পারবে। লেখকের মতে যদি কেউ যথাসাধ্য চেষ্টা করে, তবে সে তার জীবনের সব প্রয়োজন পূরণ করতে যে সুন্নাত পালন করতে হবে তা এক হাজারের কম নয়। এ ছোট পুস্তিকাটি সুন্নাতকে সহজে বাস্তবায়নের উপায় ব্যতীত আর কিছুই নয়। যদি একজন মুসলিম চায় তাহলে এক হাজার সুন্নাহ দৈনিক পালন করতে পারে এবং তা স্বভাবতই এক মাসে ত্রিশ হাজারে পরিগণিত হবে। অথচ যে লোক এই সুন্নাহগুলো সর্ম্পকে জানে না অথবা এই সুন্নাহগুলো জানলেও এগুলো পালন করছে না। তাহলে তার জন্য পরকালে কি প্রতিদান অপেক্ষা করছে? অবশ্যই সে পরকালে বঞ্চিত হবে। সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরার উপকারিতার মধ্যে রয়েছে-
১. ভালোবাসার মর্যাদায় পৌঁছাবার জন্য: আল্লাহ তা’আলার ভালোবাসা পাওয়ার সহজ উপায়, যা তাঁর ঈমানদার বান্দাদের জন্য।
২. এটি হচ্ছে ফরয কাজগুলোর কাঠিন্যতা লাঘব করার উপায়।
৩. এটি হচ্ছে বিদআতে পতিত হওয়া থেকে সুরক্ষার পথ।
৪. আল্লাহর দ্বীন যা উপস্থাপন করে তাকে মর্যাদা দেওয়ার এটি একটি নিদর্শন।
লেখক শপথ করে বলেন, হে মুসলিম উম্মাহ, তোমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে তোমাদের রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাতকে জাগরিত করো, কারণ সুন্নাহ হচ্ছে তোমাদের জীবনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে পরিপূর্ণ ভালোবাসার প্রমাণ এবং তাঁকে অনুসরণ করা তোমাদের ঈমান ও ইখলাসের বহিঃপ্রকাশ।
সকল কাজে বিশুদ্ধ নিয়্যত করা
আপনি মুমিন-মুসলিম বান্দা, বাজেই পার্থিব-অপার্থিব যেকোনো কাজে আপনি বিশুদ্ধ নিয়্যত করুন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
হযরত ওমর বিন খা্ত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই সকল আমলই নিয়্যত অনুযায়ী হয়ে থাকে, প্রত্যেকে তাই লাভ করে যা সে নিয়্যত করে।
কোন কোন কাজে নিয়ত করবে
সকল কাজের শুরুতেই নিয়ত করা সুন্নাত, কারণ সঠিক নিয়তের কারণেই কাজটি করে সাওয়াব লাভ করা যায়। ঘুমানো, খা্ওয়া, কাজ করা এবং অন্যান্য বৈধ কাজগুলো আল্লাহর আনুগত্যের কাজ এবং তাঁর নৈকট্যের উপায় হতে পারে। একজন মুমিন-মুসলমান বান্দা হিসেবে আপনার এইসব কার্যবলীর জন্য আপনি অনেক সাওয়াব লাভ করতে পারেন, যখন আপনি এগুলো করার সময় আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিয়্যত করেন। যেমন আপনি যদি তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান এই নিয়্যতে যে, আপনি যেন ক্বিয়ামুল লাইল বা ফজরের নামাযের জন্য জাগতে পারেন, তাহলে আপনার সারারাতের ঘুমটি ইবাদতে পরিণত হবে। এটি সকল বৈধ কাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।