ঐশী গ্রন্থ কুরআন পাঠের আবশ্যকতা
পবিত্র কুরআনুল কারীম মানুষের জন্য এক জীবনবিধান, পথনির্দেশিকা এবং চিন্তার খোরাক। আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন:
“এটা (কোরআন) মানুষের একটি সংবাদনামা এবং যাতে এতদ্বারা ভীত হয় এবং যাতে জেনে নেয় যে, উপাস্য তিনিই-একক; এবং যাতে বুদ্ধিমানরা চিন্তা-ভাবনা করে।” (সূরা ইব্রাহীম : ১৪:৫২)
এই বার্তা কেবল আরবি ভাষাভাষীদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য। নিজের ভাষায় কুরআন ও হাদীসের অর্থ উপলব্ধি করা তাই অপরিহার্য, বিশেষ করে যারা আরবি ভাষায় পারদর্শী নন।
আমরা অনেকেই কুরআন পড়তে চাই, কিন্তু আরবি না জানাটা প্রায়শই প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আবার ওজু বা পবিত্রতার বিষয়ে ভুল ধারণাও অনেককে নিরুৎসাহিত করে। এই নিবন্ধে আমরা নিজেদের ভাষায় কুরআন ও হাদীস পাঠের গুরুত্ব আলোচনা করব এবং একটি চমৎকার অনলাইন প্ল্যাটফর্মের পরিচয় দেবো যা আপনার এই প্রয়োজন পূরণ করবে।
কুরআন কেন নিজের ভাষায় পড়া প্রয়োজন?
আল্লাহ তায়ালা কুরআনকে সহজ করে নাজিল করেছেন যেন আমরা তা বুঝতে পারি:
“অবশ্যই আমি [এই কুরআন] তোমার ভাষায় সহজ করে প্রকাশ করেছি, যেনো তারা [এর উপদেশে] মনোযোগ দিতে পারে।” (সূরা দুখান ৪৪:৫৮)
নিজের ভাষায় কুরআন বুঝে পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
-
- গভীর উপলব্ধির জন্য: আরবি একটি সমৃদ্ধ ভাষা হলেও, অনুবাদের মাধ্যমে এর প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করা অপরিহার্য। প্রথমে নিজের ভাষায় একবার পুরো কুরআন শেষ করা আপনার আগ্রহকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে এবং অনেক ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্তি দেবে।
- ঈমান সুদৃঢ় করতে: প্রতিদিন কুরআন পাঠ নিজের ঈমান রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি স্রষ্টার সাথে আপনার সম্পর্ককে গভীর করে তোলে।
- চিন্তা ও মননশীলতা বাড়াতে: আল্লাহ প্রশ্ন করেছেন:
“তবে কি উহারা কুর-আন সম্বন্ধে অভিনিবেশ সহকারে চিন্তা করে না? না উহাদের অন্তর তালাবদ্ধ?” (সূরা মুহাম্মদ ৪৭:২৪)
এবং
“আমি তো তোমাদের প্রতি এক কিতাব অবতীর্ণ করেছি; এতে তোমাদের জন্যে উপদেশ রয়েছে। তোমরা কি বোঝ না?” (সূরা আম্বিয়া ২১:১০)
কুরআন বুঝে পড়া মানুষকে গভীরভাবে চিন্তা করতে উৎসাহিত করে।
- বিভ্রান্তি দূর করতে: কিছু মানুষ নিজেদের ‘খোলা মনের’ বা ‘বুদ্ধিমান’ দাবি করে কুরআন না পড়েই অমূলক মন্তব্য করেন। কিন্তু কোনো বিষয় সম্পর্কে না জেনেই মন্তব্য করা কি ‘খোলা মনের’ পরিচয়? আপনার সৃষ্টিকর্তা তাঁর কিতাবে কী আদেশ-নিষেধ দিয়েছেন, তা না পড়লে আপনি কীভাবে জানবেন বা মানবেন?
পবিত্রতা ও কুরআন অনুবাদ পাঠ: একটি স্পষ্ট ধারণা
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কুরআন পড়তে কি পবিত্রতার প্রয়োজন নেই? অবশ্যই আছে, তবে কুরআনের মূল আরবি কিতাব পড়ার মতো কঠোর পবিত্রতা এর অনুবাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। মনে রাখতে হবে, কুরআনের অনুবাদ কিন্তু কুরআন নয়। তাই ওজু ছাড়াও বাংলা অনুবাদ পড়া যায়। আপনি যদি serious পাঠক হয়ে থাকেন, তবে অর্থসহকারে মূল বইটি পড়ুন এবং সম্ভব হলে আরবি ভাষা শিখে নিন।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম: আপনার জন্য একটি সহজ সমাধান
আপনার এই প্রয়োজন পূরণের জন্য রয়েছে একটি ব্যতিক্রমী অনলাইন প্ল্যাটফর্ম:
- পবিত্র কোরআন শরিফের সকল সূরা, বাংলা অনুবাদ/অর্থ, তেলাওয়াত ও অনুসন্ধান/খুঁজা/সার্চ এর সুবিধার জন্য ভিজিট করুন: কুরআন বাংলা অনুবাদ | Quran Bangla Translation – QuranMajeedBD.com
- বাংলা হাদিস, ইউনিকোড বাংলা হাদিস, বোখারী হাদিস, মুসলিম হাদিস, রিয়াদুস সালেহীন এবং অন্যান্য সহীহ হাদিস গ্রন্থ সংগ্রহ এর বাংলা অনুবাদের জন্য ভিজিট করুন: Riyad us Saliheen Bangla – রিয়াদুস সালেহীন বাংলা (গুরুত্বপূর্ণ হাদিস সংগ্রহ)
আমার বিশ্বাস, ওয়েবসাইটটি আপনাদের ভালো লাগবে। এর নেভিগেশন (পরিচালনা) খুবই সহজ এবং এটি গতানুগতিক নয়। বাংলা লেখার সফটওয়্যার ইনস্টল করা ছাড়াই ইউনিকোড ফন্টে বাংলায় লিখে, আয়াত খোঁজার সুবিধা এখানে রয়েছে। ইসলামকে আরও গভীরভাবে জানতে এই সাইটটির সঙ্গে রয়েছে সমৃদ্ধ ইসলামিক ওয়েবসাইটের লিংক এবং ইসলামিক বিভিন্ন রিসোর্স (যেমন: ফ্রি ই-বুক, mp3, লেকচার, ভিডিও ডাউনলোড, ফোরাম, ব্লগ, সফটওয়্যার ইত্যাদি)।
স্রষ্টার কিতাব না পড়ার বিপদ
একটি সহজ উদাহরণের মাধ্যমে এই বিষয়টি বোঝা যেতে পারে। ধরুন, কোনো এক কোম্পানির বাধ্যতামূলক নিয়ম হচ্ছে, তাদের নিয়মকানুনগুলো শুরুতেই পড়ে জেনে নিতে হবে এবং সেভাবে মেনে চলতে হবে। এখন আপনি একজন শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান কর্মচারী হিসেবে কী করবেন? নিজেই পড়ে নেবেন? নাকি অন্যের কাছ থেকে শুনে নেবেন? নিশ্চয়ই আপনি একমত হবেন যে, প্রথম কাজটিই করবেন। অন্যের থেকে শুনলে বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে এবং অনেক জরুরি নির্দেশনা অজানা থাকার কারণে আপনার চাকরিও চলে যেতে পারে!
ঠিক তেমনি, আপনার সৃষ্টিকর্তা আপনাকে তাঁর জীবনবিধান দিয়েছেন, আর আপনি যদি তা না পড়েন, তবে কীভাবে তাঁর আদেশ-নিষেধ মানবেন? না জানার কারণে জীবনে ঝামেলায় তো পড়বেনই!
সত্যের সন্ধান ও আত্মিক সমৃদ্ধি
আস্তিক-নাস্তিক যে বিশ্বাসের অনুসারীই হন না কেন, কুরআন পড়া সকলেরই উচিত। কেন আপনার মনকে এই জ্ঞান থেকে বঞ্চিত করবেন? বিশ্বাস করুন, আপনি পড়তে শুরু করলে মনের অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। কুরআন খুব বিশাল পৃষ্ঠার গ্রন্থ নয়; দেখবেন শেষ করতে বেশি সময়ও লাগবে না। কিন্তু এটি পড়ার পর আপনার অর্জন হবে অন্যরকম।
আমরা অনেকেই কুরআন সম্পর্কে ভাসা ভাসা জ্ঞান রাখি, কেবল আরবিতে তেলাওয়াত শোনা বা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকি। আবার অনেকেই মনে করেন, কুরআন শুধুই একটি ধর্মীয় বই, এতে জ্ঞানের কী শেখার আছে? কিন্তু আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, বইটি আপনি একবার পড়ুন; আপনি আপনার সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হবেন। এই বইয়ের নিজস্ব বলার শক্তি আপনাকে মুগ্ধ করবে, কখনো বিস্মিত করবে এবং আপনাকে গভীরভাবে চিন্তা করতে আগ্রহী করে তুলবে।
একটি বিষয় আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, আল্লাহকে স্মরণ করা প্রয়োজন আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে; আল্লাহর প্রয়োজনে নয়। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং সব কিছু থেকে পবিত্র। আমরা স্মরণ করলেই আল্লাহ কেবল আমাদের সাহায্য এবং সৎ পথের দিকে স্মরণ করবেন। আর দূরে থাকতে চাইলে তাতেও আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবেন, যাতে আপনি আরও বিভ্রান্ত হন। আল্লাহ আমাদের স্বাধীনতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন। আর এটাই তাঁর পরীক্ষা – কে তাকে না দেখে বিশ্বাস ও সৎকর্ম করেছে এবং তাঁর কথা মেনে চলেছে। ন্যায়-অন্যায়ের জন্য বিচারের এবং ভালো কাজের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছেন তিনি।
আশা করছি, এই নিবন্ধটি পড়ে আপনি উপকৃত হবেন এবং অন্যদের সঙ্গেও শেয়ার করবেন, যাতে আরও বেশি মানুষ এই মহাগ্রন্থের আলো দ্বারা আলোকিত হতে পারে।