ইসলামের ইতিহাসে আল্লাহর প্রিয় বান্দা, যাদেরকে আমরা ওলী-আউলিয়া হিসেবে জানি, তাদের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পবিত্র কুরআন এবং সহিহ হাদীসে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। তারা হলেন এমন মানুষ যারা ঈমান ও তাকওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বর্তমানে এই পবিত্র ধারণাটিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে, এমনকি কখনো কখনো এমন মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে যা কেবল নবী-রাসূলদের জন্যই নির্দিষ্ট। তাই সঠিক জ্ঞান অর্জন করা এবং ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্ত থাকা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অপরিহার্য।


ওলী-আউলিয়া কারা?

ইসলামী পরিভাষায় ওলী (বহুবচন: আউলিয়া) অর্থ হলো আল্লাহর বন্ধু বা তাঁর প্রিয় বান্দা।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন:

“জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা ওইসব মানুষ যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে।”
(সূরা ইউনুস: ৬২–৬৩)

এ থেকে স্পষ্ট হলো—ওলী হওয়ার মূল শর্ত দুটি:

  1. ঈমান – আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস।
  2. তাকওয়া – আল্লাহর আদেশ মানা এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা।

এটি কোনো বংশগত পদবি নয়, আবার কোনো রহস্যময় সাধনা বা অলৌকিক শক্তির মাধ্যমেও অর্জিত হয় না।


সহিহ হাদীসে ওলীদের বৈশিষ্ট্য

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

“আল্লাহর সবচেয়ে সম্মানিত বান্দা সে-ই, যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়া অবলম্বন করে।”
(বুখারী, মুসলিম)

অন্য হাদীসে এসেছে:

“যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, হালাল-হারাম মেনে চলে—সে-ই আল্লাহর প্রিয় বান্দা।”
(মুসলিম, তিরমিযী)

অতএব, ওলী হওয়া মানেই হচ্ছে—নামাজ, রোজা, যাকাত, সৎকাজ এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জীবনযাপন।


প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা ও তাদের বিপদ

আজকের সমাজে ওলী-আউলিয়ার মর্যাদা নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে, যা মুসলিম সমাজকে বিভ্রান্ত করছে। যেমন:

  • অতিরিক্ত ভক্তি ও পূজা – অনেকেই মাজার-কবরকে ইবাদতের স্থান মনে করে, মানত করে বা সাহায্য চায়। অথচ দোয়া করার অধিকার একমাত্র আল্লাহর।
  • অলৌকিক ক্ষমতার দাবি – কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে ওলীরা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। অথচ কুরআনে বারবার বলা হয়েছে—সকল ক্ষমতা কেবল আল্লাহর হাতে।
  • নবী-রাসূলের চেয়ে বড় ভাবা – ওলীদের নবী-রাসূলের উপরে স্থান দেওয়া সরাসরি ইসলামের মূল শিক্ষার পরিপন্থী। নবীরা সর্বশ্রেষ্ঠ, ওলীরা তাঁদের অনুসারী মাত্র।

এসব ভ্রান্ত ধারণা মানুষকে ধীরে ধীরে শিরকের মতো মহাপাপে ঠেলে দেয়।


একজন মুসলিমের করণীয়

ভ্রান্তি থেকে বাঁচতে হলে প্রতিটি মুসলিমকে কিছু নীতি মেনে চলতে হবে:

  1. কুরআন ও সহিহ হাদীসের অনুসরণ – সঠিক ইসলামী জ্ঞান কেবল এখান থেকেই আসে।
  2. যথাযথ সম্মান প্রদর্শন – ওলীদের সম্মান করতে হবে, তবে তাদেরকে নবী বা আল্লাহর সমকক্ষ ভাবা যাবে না।
  3. শুধু আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাওয়া – দোয়া, মানত ও প্রার্থনা একমাত্র আল্লাহর জন্য।
  4. সচেতনতা বৃদ্ধি – পরিবার ও সমাজে কুসংস্কার দূর করতে শিক্ষা ও আলোচনার মাধ্যমে কাজ করতে হবে।

ওলী-আউলিয়াদের মর্যাদা ইসলাম স্বীকৃত করেছে, তবে কুরআন ও সহিহ হাদীসের আলোকে সীমাবদ্ধ রেখেছে। তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা, কিন্তু কখনোই আল্লাহর শরিক নন, নবী-রাসূলের সমকক্ষ নন।

তাদের থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত তাকওয়া, ইবাদত ও নেক আমলে। ভক্তি ও শ্রদ্ধা থাকবে, তবে বাড়াবাড়ি নয়।

👉 তাই আসুন, আমরা আল্লাহর প্রকৃত বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করি—ঈমান, তাকওয়া, নামাজ, রোজা, যাকাত ও সৎকাজের মাধ্যমে।

ফেসবুকে যারা মন্তব্য করেছেনঃ
(Visited 3 times, 1 visits today)