নামাজ মুসলিম জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তবে অনেকেই জানেন না, নামাজ শেষে যে যিকর ও দোয়াগুলো রয়েছে, সেগুলোর ফজিলত কত বিশাল! রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবাদের শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে নামাজের পর পরিশুদ্ধ হৃদয়ে আল্লাহর যিকর করতে হয়। এই প্রবন্ধে আমরা জানবো সহীহ হাদীসের আলোকে নামাজ পরবর্তী সুন্নত দোয়া ও যিকরসমূহ, এবং এগুলোর ফজিলত।
🧎♂️ নামাজ শেষে পড়ার দোয়া ও যিকরসমূহ
তিনবার ইস্তিগফার
اَسْتَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।
📖 হাদীস থেকে প্রমাণিত যে রাসূল ﷺ ফরজ নামাজের পর তিনবার ইস্তিগফার করতেন। এটি গুনাহ মাফ ও অন্তরের পরিশুদ্ধির আমল।
শান্তির দোয়া
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالإِكْرَامِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা আস-সালাম, ওয়া মিনকা আস-সালাম, তাবারাকতা ইয়াযাল-জালালি ওয়াল-ইকরাম
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি শান্তি, শান্তি আপনার পক্ষ থেকেই আসে। হে মহিমাময় ও সম্মানিত, আপনি কল্যাণময়।
তাসবীহ ফাতিমা (৩৩/৩৪ বার)
- সুবহানাল্লাহ – ৩৩ বার
- আলহামদুলিল্লাহ – ৩৩ বার
- আল্লাহু আকবার – ৩৪ বার
📖 সাহাবা ও সাহাবিয়াতদের শিক্ষা দিতেন রাসূল ﷺ এই আমল। এটি রাত্রি বিশ্রামের পূর্বেও সুন্নত।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ যিকর
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হামদ, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদীর
📖 এটি নামাজ শেষে পড়লে এক হাজার নেকি, এক হাজার গুনাহ মাফ ও এক হাজার স্তর উন্নীত হয়।
আয়াতুল কুরসী পাঠ
সূরা বাক্বারা: ২৫৫
“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম…”
📖 রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে, তার এবং জান্নাতের মাঝে শুধু মৃত্যু ব্যতীত আর কিছুই বাধা হবে না।”
— (সহীহ হাদীস)
ত্রিসূরা (সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস)
প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে একবার করে এই তিনটি সূরা পড়া সুন্নত।
উপকারী দোয়া: সাহায্য চাওয়ার দোয়া
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আঈন্নি ‘আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনাকে স্মরণ করা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ও সুন্দর ইবাদতের ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করুন।
📖 এটি মুয়াজ (রাঃ) কে রাসূল ﷺ নিজ হাতে শিখিয়ে বলেছিলেন—নামাজ শেষে নিয়মিত পড়তে।
💡 বিশেষ নসিহত ও উপকারিতা
- নামাজ পরবর্তী যিকর ও দোয়া হলো শয়তানের প্রতিরোধ, আত্মশুদ্ধি ও জান্নাতের পথে সহায়ক।
- প্রতিটি যিকরের রয়েছে আলাদা ফজিলত এবং আল্লাহর কাছে মর্যাদা বৃদ্ধির মাধ্যম।
- সাহাবায়ে কিরামগণ (রাঃ) এসব দোয়া পড়ার ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন।
নামাজ শুধু ফরজ শেষ করেই নয়, বরং তা একটি পূর্ণ ইবাদত হয়ে উঠে নামাজের পরে যিকর ও দোয়ার মাধ্যমে। আসুন, আমরা নিজেদের নামাজের পর এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত দোয়া ও যিকরসমূহ নিয়মিত পড়ি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি।