আল-কুরআন হলো মানবজাতির জন্য আল্লাহর সর্বশেষ হিদায়াত। এটি এমন এক কিতাব, যা শুধু পাঠ করার জন্য নয়, বরং বুঝে আমল করার জন্য নাজিল হয়েছে। কুরআনের আয়াতগুলো গভীর অর্থবোধক ও বিস্তৃত। তাই এর সঠিক ব্যাখ্যা ছাড়া আয়াত বোঝা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব। এজন্য প্রয়োজন হয় সহীহ, নির্ভরযোগ্য তাফসীর (ব্যাখ্যা)।
তাফসীর কী এবং কেন প্রয়োজন?
তাফসীর অর্থ: ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ বা ব্যাখ্যা প্রদান। ইসলামি পরিভাষায়, তাফসীর বলতে বোঝায় আল-কুরআনের আয়াতসমূহের অর্থ ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা, যাতে পাঠক আয়াতের গভীরতর তাৎপর্য বুঝতে পারে।
কেন প্রয়োজন:
- কুরআনের অনেক আয়াত সরাসরি বোধগম্য নয়
- কিছু আয়াত একে অপরের ব্যাখ্যা করে
- সাহাবা-তাবিয়ীনদের ব্যাখ্যার সাহায্য প্রয়োজন
- হাদীস ছাড়া কুরআনের অনেক বিধান স্পষ্ট হয় না
📖 আল্লাহ বলেন:
“আমি তোমার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের কাছে তা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে পারো।”
— (সূরা নাহল: ৪৪)
📚 কুরআনের তাফসীর করার সঠিক পদ্ধতি
১. কুরআন দিয়ে কুরআনের ব্যাখ্যা
কোনো আয়াতের অর্থ বোঝার জন্য প্রথমে কুরআনের অন্য আয়াতে রেফারেন্স দেখতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে একটি আয়াত অন্য আয়াতের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে।
২. হাদীস ও সুন্নাহর মাধ্যমে ব্যাখ্যা
যেখানে কুরআন নীরব, সেখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেই সেই আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন হাদীসের মাধ্যমে।
৩. সাহাবা-তাবিয়ীনদের ব্যাখ্যা অনুসরণ
বিশেষ করে ইবনে আব্বাস (রাঃ), যিনি “তাফসীরের ইমাম” নামে পরিচিত।
৪. আরবী ভাষা ও ব্যাকরণ অনুযায়ী বিশ্লেষণ
কুরআনের ভাষা সাহিত্যিকভাবে গভীর, তাই আরবী ব্যাকরণ জানা তাফসীরের জন্য সহায়ক।
📘 বাংলা ভাষায় যেসব তাফসীর সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য
১. তাফসীর ইবনে কাসীর (বাংলা অনুবাদ)
- বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহীহ তাফসীর
- সহীহ হাদীস ও সাহাবাদের মতামতের ভিত্তিতে আয়াত ব্যাখ্যা
- বিস্তারিত পড়ুন 👉 তাফসীর ইবনে কাসীর
২. তাফসীরুল কুরআনুল কারীম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
- সরকারি উদ্যোগে অনুবাদিত, সহজ ভাষা
- শিক্ষামূলক ও গবেষণামূলক
৩. আহকামুল কুরআন, মারেফুল কুরআন, ফী যিলালিল কুরআন (অনুবাদ)
- ফিকহভিত্তিক, আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণসহ তাফসীর
🔍 তাফসীর বাছাইয়ের সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক হবেন
- হাদীস ও সহীহ সূত্র ছাড়া তাফসীর না পড়া
- কিসসা-কাহিনী ও মওজু হাদীসে ভর্তি বই এড়িয়ে চলা
- সালাফে সালেহীনের ব্যাখ্যার বাইরে মতবাদ গ্রহণ না করা
- ব্যক্তিক চিন্তা বা “মতবাদের তাফসীর” থেকে বিরত থাকা
📖 হাদীস:
“যে ব্যক্তি নিজের মত অনুযায়ী কুরআনের ব্যাখ্যা করে, সে ভুল করেছে— যদিও সে সঠিক হয়।”
— (আবু দাউদ)
একজন মুসলমানের জন্য কুরআন বুঝে পড়া একটি অপরিহার্য কর্তব্য। আর কুরআন বুঝতে হলে প্রয়োজন সহীহ তাফসীর। বাংলা ভাষায় এখন অনেক নির্ভরযোগ্য তাফসীর পাওয়া যায়, তাই আমাদের উচিত সহীহ উৎস থেকে তাফসীর পড়া, শেখা এবং সে অনুযায়ী জীবন গঠন করা।
আল্লাহ বলেছেন:
নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রতি সত্যসহ গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি যেন তুমি তদনুযায়ী মানবদের মাঝে বিচার-ফয়সালা করতে পার। যা আল্লাহ তোমাকে শিক্ষা দান করেছেন এবং তুমি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষে বিতর্ককারী হয়ো না। (সূরা আন নিসা: ১০৫)
তাফসীর ইব্নে কাসীর
ইবনে কাসীর (১৩০১-১৩৭৩)-এর লেখা কোরআন তাফসীর বই। এটি সকল তাফসীর বই গুলোর মধ্যে সমগ্র বিশ্বে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং স্বীকৃত ব্যাখ্যা। এতে খুঁজে পাবেন হাদীসের সেরা উপস্থাপনা, ইতিহাস, এবং পাণ্ডিত্যপূর্ণ ভাষ্য।

বইটির প্রকাশনার তথ্য
বইঃ তাফসীর ইবনে কাসীর (১-১৮ খন্ড)
মূল: হাফেজ আল্লামা ইমাদুদ্দিন ইব্নু কাসীর (রহঃ)
অনুবাদ: ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান মাওলানা আকবর শাহ খান নজিবাবাদী
প্রকাশকঃ তাফসীর পাবলিকেশন কমিটি
Download Links
thenkyou
Nice