ইসলামী শরীয়তের দুই মূল উৎস—আল্লাহর কালাম কুরআন এবং রাসূল (সা)-এর হাদীস। কুরআন যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সরাসরি বাণী, হাদীস হল সেই বাণীর ব্যাখ্যা ও বাস্তব জীবনের রূপায়ণ। রাসূল (সা) নিজেই বলেছেন, “আমি কুরআন এবং এর সঙ্গে এর সমপর্যায়ের আরেকটি জ্ঞান (হাদীস) দান করা হয়েছি।”
সেই হাদীসসমূহের মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বিশুদ্ধ হাদীস সংকলন হচ্ছে সহীহ বুখারী। এটি শুধু ইসলামী আইন ও বিশ্বাস নয়, বরং নৈতিকতা, ইতিহাস, সমাজনীতি, শিক্ষা—জীবনের প্রতিটি দিকের বিশ্লেষণ ও দিকনির্দেশনা দেয়।
ইসলামিক গবেষণা ও সাহিত্যের ইতিহাসে এটি একটি অবিস্মরণীয় গ্রন্থ। কেবল কুরআনের পর এটিকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে গণ্য করা হয়।
✍️ ইমাম বুখারী (রহ.) – সাহীহ হাদীস সংকলনের এক মহামানব
ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আল-বুখারী (রহ.) ছিলেন হাদীসশাস্ত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যাঁর নাম আজও সারা বিশ্বের মুসলমানদের হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধায় উচ্চারিত হয়। তিনি ১৯৪ হিজরিতে (৮১০ খ্রিস্টাব্দ) বর্তমান উজবেকিস্তানের বুখারা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পিতার মৃত্যু হলে, মাতা তাঁকে দীনি শিক্ষা ও সততা-নিষ্ঠার আলোকে গড়ে তোলেন।
অত্যন্ত ক্ষুরধার মেধার অধিকারী ইমাম বুখারী খুব অল্প বয়সেই কুরআন হিফজ করেন এবং ১০ বছর বয়সেই হাদীস মুখস্থ করা শুরু করেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি মক্কা ও মদিনা সফর শুরু করেন এবং জীবনের প্রায় তিন দশক কাটিয়েছেন বিভিন্ন ইসলামিক শহর ঘুরে ঘুরে সহীহ হাদীস সংগ্রহ করতে—যেমন মিসর, শাম, বসরা, বাগদাদ, কুফা ও হিজাজ।
তিনি প্রায় ৬ লাখ হাদীস মুখস্থ করেছিলেন, কিন্তু কঠোর যাচাই-বাছাই ও বিশুদ্ধতার মানদণ্ডে মাত্র ৭২৭৫টি হাদীসকে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “জামে আস-সহীহ” বা সহীহ বুখারীতে স্থান দেন। তিনি হাদীস গ্রহণে বর্ণনাকারীর চরিত্র, স্মৃতি ও ধারাবাহিকতার কঠিন মানদণ্ড নির্ধারণ করেন, যা আজও হাদীস শাস্ত্রে সর্বোচ্চ মানদণ্ড হিসেবে স্বীকৃত।
তাঁর লিখিত সহীহ বুখারী কিতাবটি কুরআনের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থ হিসেবে উম্মাহর স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি ২৫৬ হিজরিতে (৮৭০ খ্রিস্টাব্দ) সামরকন্দের নিকটবর্তী খারতাঙ্ক গ্রামে ইন্তেকাল করেন।
🌟 শিক্ষণীয় দিক
ইমাম বুখারী (রহ.)-এর জীবন আমাদের শেখায়—সততা, অধ্যবসায়, গভীর জ্ঞান ও আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠতা হলে একজন মানুষ উম্মাহর জন্য কী বিশাল অবদান রাখতে পারেন।
কেন পড়বেন বাংলা সহীহ বুখারী?
🔹 কুরআনের পর সর্বাধিক প্রামাণ্য গ্রন্থ – রাসূল (সা) নিজে বলেছেন, “আমাকে কুরআন এবং এর সমপর্যায়ের আরেকটি জ্ঞান (হাদীস) দান করা হয়েছে।”
🔹 সুন্নাহ বোঝার মূল চাবিকাঠি – ইসলামী আইন, আকীদা, আখলাক, ইবাদত, নৈতিকতা, অর্থনীতি, রাজনীতি, পরিবার, সমাজ, বিচারব্যবস্থা ও সমাজ গঠনে রাসূল (সা)-এর সুন্নাহর বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা।
🔹 সমগ্র মুসলিম বিশ্বের ঐকমত্য – উলামায়ে কেরাম ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শিক্ষা ও ইবাদতের এক নির্ভরযোগ্য সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য হাদীস গ্রন্থ।
🔹 ইসলামী জ্ঞানের ভিত্তি ও অনুশীলন – প্রতিটি হাদীসের সঙ্গে প্রসঙ্গ ও অধ্যায়বিন্যাস থাকায় শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য আদর্শ।
বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য এটি অনুবাদ ও উপস্থাপনার দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক সম্পদ, যা না পড়লে মুসলিম জীবনের সঠিক দিকনির্দেশনা জানা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
📥 সহীহ বুখারী PDF ডাউনলোড (বাংলা অনুবাদ)
আপনার সুবিধার্থে প্রতিটি খণ্ডের বাংলা অনুবাদে PDF লিংক নিচে দেয়া হলোঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন্স এর সাহিহুল বুখারীর (ইন্টারেক্টিভ লিঙ্ক সহ নতুন সংস্করণ)
- 📄 খণ্ড ১: Download PDF
- 📄 খণ্ড ২: Download PDF
- 📄 খণ্ড ৩: Download PDF
- 📄 খণ্ড ৪: Download PDF
- 📄 খণ্ড ৫: Download PDF
- 📄 খণ্ড ৬: Download PDF
- 📄 খন্ড ১-৬: Download PDF
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর বুখারি শরীফ (১-১০ খণ্ড)
- 📄 খন্ড ১-১০ একত্রেঃ Download PDF
📚 বই ডাউনলোড লিঙ্কের উৎস: QuranerAlo.com – এই লিংকগুলো উক্ত সাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে জনসাধারণের উপকারার্থে.
💡 যদি আপনার সামর্থ্য থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে প্রকাশনী থেকে মূল বইটি ক্রয় করুন — এটি লেখক ও প্রকাশকদের ন্যায়সংগত প্রাপ্য এবং ইসলামী জ্ঞানের প্রসারে একটি সুন্দর অবদান।
সহীহ বুখারী শুধুমাত্র একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, এটি একটি জীবনব্যবস্থা। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রকৃত জীবনচিত্র ও ইসলামী বিধান বোঝার জন্য এই বই পাঠ একান্ত প্রয়োজন।
আসুন, আমরা এই বইটি অধ্যয়ন করে আল্লাহর হুকুম ও রাসূল (সা)-এর সুন্নাহর পথে নিজেকে গড়ে তুলি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সহীহ হাদীস বুঝে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।